তবুও বিজয়

তবুও বিজয়

সোহেল মাহরুফ

এই হতাশায় ঘেরা ধূসর জীবন কখনই সামিহার কাম্য ছিল না। কখনও সে ভাবতে পারেনি তার জীবন এত ছোট গন্ডিতে বন্দি হয়ে যাবে। ভার্সিটিতে ক্লাস করা তারপর বাসায় ফিরে নিজের রুমে টিভি, কম্পিউটার আর গল্পের বই নিয়ে পড়ে থাকা। এটাই হল তার পৃথিবীর পরিধি। ইদানিং মা আর ছোটবোন লামিহার দুর্ব্যবহার তার দুর্বিষহ জীবনকে আরো বিষময় করে তুলেছে। সে এ জীবন থেকে পালাতে চায়। কিন্তু উপায় জানে না। তাই প্রায়ই সে একা বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফেলে আসা দিনগুলোর কথা ভাবে।

ভাবে, কত কোলাহল হৈ চৈ এ ভরা ছিল তার জীবন। বন্ধু বান্ধব আড্ডা- কত রঙিন স্বপ্নের দিন। আজ সবই বিবর্ণ ধূসর স্মৃতি। অথচ এমনতো হবার কথা ছিল না। শুধু একটা অ্যাকসিডেন্ট- একটা অ্যাকসিডেন্ট সব ওলটপালট করে দিল। তিন চার বছর আগের কথা। সেবার তারা গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিল। গাড়ির পেছন দিকের ডান পাশের সিটে সে বসেছিল। পাশেই ছিল লামিহা। দু’জনেই গাড়িতে বসে বেশ হৈ চৈ করছিল। তারপর হঠাৎ উল্টোদিক থেকে আসা একটা ট্রাকের সাথে সংঘর্ষ। তারপর তার আর কিছু মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরল তখন সে নিজেকে আবিষ্কার করল সিঙ্গাপুরে- একটি হাসপাতালের বেডে। আশ্চর্যের বিষয় হল সেই অ্যাকসিডেন্টে আর কারোই কিছু হয়নি। এমনকি গাড়িরও খুব একটা ক্ষতি হয়নি। শুধু সামিহার জীবনটাই অন্ধকারে ঢেকে গেছে। ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করেও তার ডানচোখ রক্ষা করতে পারেনি। প্রথমে এটা বুঝতে পারার পর মনে হয়েছিল এর চেয়ে তার মরে যাওয়াটা ই ভালো ছিল। কিন্তু পরে সে এটা নিয়তি বলেই মেনে নেয়।


চার মাস সেখানে চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে দেশে ফেরে। প্রথম প্রথম একটু সমস্যা হত। পরে ধীরে ধীরে মানিয়ে নেয়। কিন্তু সমস্যা থেকেই যায়। বিশেষ করে বিভিন্ন জনের  সান্ত্বনাসূচক মন্তব্য যেটা তাকে ভেতরে ভেতরে ভীষণ বিদ্ধ করত। এছাড়া সে বাইরে সানগ্লাস পরে বের হত। দিনের বেলাতো বটেই এমনকি রাতেও। এটা নিয়ে প্রায়ই তাকে আর তার মাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হত। বিশেষ করে, রাতে যখন কোনো অনুষ্ঠানে সানগ্লাস পরে যেত। এজন্য ধীরে ধীরে অনেক কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। বাইরের সব অনুষ্ঠানে আয়োজনে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। তার জগৎ বলতে এখন শুধু বাসা আর ভার্সিটি। এই দুঃসহ জীবনেও বাবা মার সাপোর্ট তাকে সাহস জোগায়। সে প্রত্যয়ী হয়ে ওঠে। ভাবে, তাকে বড় কিছু হতে হবে। এই প্রত্যয়ে সে পড়াশোনার মাঝে ডুব দেয়। আর ফলাফলস্বরূপ অবিশ্বাস্য ভালো রেজাল্ট। সে এখন অ্যাপ্লাইড ফিজিক্সে অনার্স করছে। তার যা রেজাল্ট এতে করে হয়তো অনার্স শেষ হতে না হতেই একটা স্কলারশিপ নিয়ে সে বাইরে চলে যেতে পারবে। তখন তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। কিন্তু ইদানিং মায়ের আর লামিহার দুর্ব্যবহার তার জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে লামিহা যত বড় হচ্ছে মার তত ধারণা হচ্ছে যে, যেহেতু সামিহার এই অবস্থা সেজন্য হয়তো লামিহার বিয়েও আটকে যেতে পারে। আর এই ভেবে তিনি তার ওপর ভীষণ বিরক্ত। প্রায়ই কারণে অকারণে তা প্রকাশ করে ফেলেন। আর লামিহাও ইদানিং ভীষণ প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠেছে। পান থেকে চুন খসলেই খেপে যায়।

সে আর লামিহা একই রুমে থাকে। তাই যখন লামিহার কোন বন্ধু বান্ধব আসে তখন যদি সে রুমে ঢুকে তাহলে লামিহা ভীষণ বিরক্ত হয়। এগুলো নিয়ে প্রায়ই সামিহার মন খারাপ হয়। তবু সে সব ভুলে নিজের জগতে হারিয়ে যায়। ভাবে নিজের স্বপ্ন ছোঁয়ার কথা। তাই পড়াশোনায় ডুব দেয়।


আজও ভার্সিটি থেকে ফিরে নিজের বিছানায় একটা গল্পের বই নিয়ে শুয়ে আছে। এমন সময় হঠাৎ ড্রইংরুমে মা এবং লামিহার উচ্চৈঃস্বরে কথা শুনতে পায়। সে বুঝতে পারে না ঘটনাটা কি। তাই আবার নিজের পড়ার মধ্যে ডুব দেয়। কিছুক্ষণ পরে লামিহা রুমে ঢুকে। পেছনে ড্রাইভার আর দারোয়ান অনেক কষ্টে একটা প্রমাণ সাইজ ছবির ফ্রেম নিয়ে ঢুকে। মা তখনও পেছন থেকে বিরক্তিতে গজগজ করতে থাকেন। সামিহা বুঝতে পারে না ছবিটা কার আর মায়ের বিরক্তির কারণটাও বুঝতে পারে না। ড্রাইভার আর দারোয়ান অনেক কষ্টে ছবিটা দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয়। পুরো দেয়াল দখল করে রাখে ছবিটা। লামিহা ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে ছবিটা দেখে। তারপর স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। সামিহাও বিছানায় বসেই ছবিটা দেখে। দেখে একটা ছেলে চোখে কালো সানগ্লাস দিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। পেছনে হার্লি ডেভিডসনের বাইক। ছেলেটাকে তার কাছে কেমন চেনা চেনা লাগে। তবু কালো গ্লাসের কারণে চিনতে পারে না। সে লামিহাকে জিজ্ঞেস করে- কিরে এটা কার ছবি? তার এ প্রশ্নে লামিহা আহত হয়। বলে- তুই তো আর এসবের খবর রাখিস না। চিনবি কেমনে? এ হচ্ছে ব্যান্ড এলোন এর ভোকাল তাসনিম।

-তাই। তা ওর এত বড় ছবিটা রুমে ঝুলাতে হবে কেন?

এ প্রশ্নে লামিহা যেন আরো বেশি আহত হয়। বলে- তুই কি বলিস! ও হচ্ছে বর্তমানে ক্রেজ- তণ তরুণীদের হার্টথ্রুব আর্টিস্ট। ওর ছবি ঝুলাব না তো কার ছবি ঝুলাব। বলেই সে আর কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। সামিহা ছবিটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে। তার কেবলই মনে হয় ছেলেটাকে সে কোথায় দেখেছে। কিন্তু মনে করতে পারে না। অনেকক্ষণ দেখতে দেখতে হঠাৎ দু’য়ে দু’য়ে চার হয়ে যায়। বাইকের ডিজাইন আর চুলের স্টাইল দিয়ে সে ছেলেটাকে শনাক্ত করে ফেলে। আবিষ্কার করে- সে ছেলেটাকে তাদের ভার্সিটিতেই- তার ডিপার্টমেন্টের বিল্ডিং এর সামনেই দেখেছে। কিন্তু সেখানে তাকে দেখে সেরকম কিছু মনে হয়নি।  মনে হয়নি যে ঘরের দেওয়ালে তার প্রমাণ সাইজ ছবি টাঙিয়ে রাখার মতো কেউ। এসব ভাবতে ভাবতেই তার একদিনকার ঘটনা মনে পড়ে।


মনে পড়তেই সে নিজের মনে নিজে হাসে। ঘটনাটা এই ছেলেটাকেন্দ্রিক। সেদিন ছেলেটা তার বন্ধুদের সাথে ওদের ডিপার্টমেন্টের সামনে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। হঠাৎ সানগ্লাস পরা অবস্থায় সামিহাকে দেখে তারা নড়েচড়ে ওঠে। ছেলেটা বাজি ধরে সামিহার সাথে কথা বলবে। বেশ সাহস নিয়ে সামনে এগিয়েও আসে। কিন্তু সামনে এসে কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। তারপর থেকে প্রায়ই ছেলেটাকে তার ডিপার্টমেন্টের সামনে দেখত। কখনও একা কখনও বন্ধুদের সাথে। মাঝে মাঝে তার পিছু নিয়ে কিছুদূর এগিয়ে আসত। কিন্তু কথা বলার সাহস পেত না। মাঝে মাঝে বাসায় ফেরার পথে প্রায়ই দেখতো ছেলেটা বাইক নিয়ে তার গাড়ি ফলো করছে। প্রথম প্রথম ভয় পেলেও পরে তার কাছে মনে হয়েছে ছেলেটার কাছ থেকে তার কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তাই সে ব্যাপারটা নিয়ে আর মাথা ঘামায়নি। কিন্তু আজ লামিহার কাছ থেকে ছেলেটার নূতন পরিচয় পেয়ে তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। ভাবলো, জীবনটা নিয়ে একটু খেলাই যাক না। একটু রিস্ক যদিও আছে- তবু তার হারানোর তো কিছু নেই। তবু যদি লামিহাকে একটা শিক্ষা দেয়া যায়। এই ভাবনাতেই সে হঠাৎ ডুবে যায়। খোলা বইটা পাশে পড়ে থাকে- সিডিতে বেজে চলে ধীর লয়ের গান। কিন্তু সামিহার সেদিকে কোন খেয়াল নেই। সে এক নূতন পরিকল্পনায় ব্যস্ত।


পরদিন যথারীতি সামিহা ভার্সিটিতে যায়। দেখে ছেলেটা যথারীতি তার বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে এবং যথারীতি সামিহাকে দেখে তার পিছু পিছু আসতে থাকে। সামিহা এটা দেখে খুব খুশি হয়। ভাবে নিয়তিও আজ তার প্লান মতো কাজ করছে। ছেলেটা কাছাকাছি আসতেই সে দাঁড়িয়ে পড়ে- এক্সকিউজ মি! আপনি কি আমাকে কিছু বলতে চান?

তার এমন সরাসরি প্রশ্নে ছেলেটা বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। বলে- না না মানে আপনি কোন ডিপার্টমেন্টে পড়েন?

ছেলেটার এমন অসহায় অবস্থা দেখে সামিহার খুব হাসি পায়। তবু সে হাসি চেপে রেখে বলে- অ্যাপ্লাইড ফিজিক্সে। আপনি?

-আমি--- আমি পাবলিক অ্যাডে।

-ও আচ্ছা! তা আপনি দেখছি আমাকে প্রায়ই ফলো করেন। ব্যাপারটা কি?

-না, মানে আপনাকে খুব ভালো লাগে।

-তাই! থ্যাঙ্কয়্যু। আর কিছু?

-আপনার সাথে একটু কথা ছিল।

সামিহা যেন এই জবাবটাই আশা করছিল। যদিও ছেলেটার নাজুক অবস্থা দেখে তার প্রচন্ড হাসি পায় তবু সে হাসি চেপে রেখে গম্ভীরভাবে বলে- কি বলবেন বলে ফেলুন।

-না এখন না পরে বলব। আপনার ক্লাসের দেরি হয়ে যাবে।

-না দেরি হবে না। আমার ক্লাস আধঘন্টা পরে।

-না না, আপনি তাড়াহুড়ো করে রৌদ্র থেকে ক্লাসে ঢুকলে মনোযোগ দিতে পারবেন না। আগেভাগে গিয়ে রেস্ট করুন। পরে কথা বলব।

ছেলেটার এমন ছ্যাবলা মার্কা কথায় সে আর হাসি চেপে রাখতে পারে না। হাসতে হাসতেই বলে- ওকে। বাই।

-বাই। বলেই যেন ছেলেটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।

ক্লাস শেষে সামিহা বের হয়ে দেখে ছেলেটা যথারীতি তার হার্লি ডেভিডসন বাইকে বসে আছে- একা একা। তাকে দেখেই এগিয়ে আসে- এখন কি আপনার সময় হবে?

-সরি, আমি তো বাসায় বলে আসিনি। এখনই আমার গাড়ি চলে আসবে।

সামিহার এমন কথায় ছেলেটা একটু আহত হয়। তবুও সামলে নিয়ে বলে- তাহলে কখন?

-আগামীকাল।

-সরি, আমি তো কয়েকদিনের জন্য শহরের বাইরে যাব।

-তাহলে।

-আগামী রোববার। দুপুরে।

-ওকে।

- তোমার সেল নম্বরটা দেবে? সরি, তুমি বলে ফেললাম।

-ইটস্ ওকে। বাট আপনার নামটাই তো জানা হল না। সেল নম্বর দিই কেমনে?

-আমি তাসনিম। তুমি?

-সামিহা।

-সেল নম্বর?

-সরি, আমার সেল নম্বর তো আমি কাউকে দিই না।

-তাহলে আমারটা রাখ। ফ্রি সময়ে কল অথবা মিসকল দিও। বলেই ছেলেটা একটা কার্ড বের করে দেয়। সামিহা দেখে ছেলেটার ব্যান্ডের কার্ড। সে থ্যাঙ্কস্ দিয়ে কার্ডটা পার্সে রাখে। গাড়ি চলে আসাতে কথা আর এগোয় না। মিষ্টি হেসে বিদায় নেয়।


সারাটা পথ ধরেই সামিহার মনে অদ্ভুত আনন্দ কাজ করে। তার কেবলই মনে হচ্ছে খেলাটা ভালোই জমবে। বাসায় ঢোকার পরও তার আনন্দে ছেদ পড়ে না। রুমে ঢুকেই দেখে লামিহা শুয়ে আছে। সিডিতে যথারীতি তাসনিমের গান বাজছে। সে কাঁধের ব্যাগ নামিয়ে রাখতে রাখতেই জিজ্ঞেস করে- কিরে আজ ক্লাসে যাসনি?

লামিহার নিরুত্তাপ উত্তর- গেছিলাম। কিন্তু তাসনিমের নূতন একটা এ্যালবাম পাইলাম তাই চলে এসেছি।

-মানে?

-মানে গানগুলো না শোনা পর্যন্ত কোন কিছুতেই মন বসবে না। তাই বাসায় চলে এলাম।

-আজব! গান শোনার জন্য ক্লাস বাদ দিতে হয়!

-তুই এসবের কি বুঝবি! তোর তো এগুলো সম্বন্ধে কোন আইডিয়া নাই।

-তাই। বলেই সামিহা মুচকি হাসি দেয়। বলে- তা তাসনিমের সাথে তোর কখনও দেখা হয়েছে?

-হয়েছে- মানে কনসার্টে দেখেছি।

-কথা হয়েছে?

-মাথা খারাপ! ও এত্ত বড় স্টার! ওর সাথে কথা বলা কি যা তা ব্যাপার?

-কেন সামনা সামনি কথা না হোক সেলে বলবি। তোর এত প্রিয় একজন মানুষ তার সাথে কথা বলবি না!

-ইচ্ছে হয়। কিন্তু সেল নম্বর কোথায় পাব?

-লাগবে? ধর। বলেই সামিহা তাসনিমের কার্ড এগিয়ে দেয়। কার্ডটা পেয়ে লামিহা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পায়। বলে- আপু, তুই এই কার্ড কোথায় পেয়েছিস্?

-এই আর কি পাইছি।

-তোর সাথে কি তাসনিমের পরিচয় আছে?

-মাথা খারাপ! আমার সাথে পরিচয় হবে কোত্থেকে?

-তাই তো বলি। কিন্তু... লামিহা কথা আর শেষ করে না। সে মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে নম্বর টিপতে যায়। হঠাৎ মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলে- আপু, সত্যি করে বলতো তোর সাথে কি তাসনিমের পরিচয় আছে?

-কেন?

-তাহলে তুই একটু কথা বলে আমাকে দে। আমার কেমন নার্ভাস লাগছে।

-কি বলছিস্ আমার কি ওসব সম্বন্ধে আইডিয়া আছে? তুইই কথা বল। আর নার্ভাস লাগার কি আছে? ওরাও তো মানুষ।

-তারপরও। কত বড় স্টার!

-অসুবিধা নেই। পরে যখন নার্ভাস লাগবে না তখন ফোন দিস্।

লামিহাও তাতে সায় দেয়। কার্ডটা খুব সযত্নে তার কাছে রেখে দেয়। আর চোখের চাহনিতে সামিহার কাছে তার কৃতজ্ঞতা বুঝিয়ে দেয়। সামিহা রহস্যময় হাসি হেসে আড়চোখে লামিহার দিকে তাকায়।


চোখের পলকে সময় চলে যায়। কাল দুপুরেই তাসনিমের সাথে সামিহার দেখা করার কথা। সামিহার খুব টেনশন হয়। সে অনেক কিছু ভাবে। তারপরও ভাবনারা এক জায়গায় এসে জট বেঁধে যায়। সে আর ভাবতে পারে না। সে তাসনিমকে ফোন দিয়ে দেখা করার জায়গা আর সময় কনফার্ম করে নেয়। একবার ভাবে- না খেলাটা কালই শেষ করে দেবে। তারপর আবার ভাবে না আরেকটু দেখবে। পরে সিদ্ধান্ত নেয় কালই খেলাটা শেষ করবে। তারপর তার সাথে সম্পর্ক হোক না হোক সেটা পরে দেখা যাবে। আর তারতো হারানোর কিছু নেই। তাই সকাল বেলা উঠেই সে লামিহাকে অফার করে তার সাথে যাওয়ার জন্য। কিন্তু লামিহা কিছুতেই যাবে না। তার এই কাজ সেই কাজ নানা অজুহাত। পরে মা বাবাকে বলে সে লামিহাকে রাজি করায়।

অতঃপর নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে হাজির হয় নির্দিষ্ট স্থানে। এটা একটা রেকর্ডিং স্টুডিও। পাবলিক গ্যাদারিং এর ভয়ে তাসনিম এখানে দেখা করতে বলেছে। এ দেখে লামিহার বেশ খটকা লাগে। সে জিজ্ঞেস করে- কি রে এখানে কেন?

সামিহা রহস্যময় হাসি হেসে বলে- চল্ ভেতরে গেলেই বুঝতে পারবি।

নাম বলতেই স্টুডিওর ছেলেটা তাদের ভেতরে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর তাসনিম এসে উপস্থিত হয় তাদের সম্মুখে। সামিহা বেশ সাবলীলভাবেই বলে- হাই। তারপর পরিচয় করিয়ে দেয় লামিহার সাথে। লামিহা কিছু বলতে পারে না। সে ফ্যালফ্যাল চোখে সামিহার দিকে তাকিয়ে থাকে। সামিহা একবার আড়চোখে লামিহার বিস্ময়ভরা মুখ দেখে নেয়। তার ঠোঁটের কোণে চাপা কৌতুকের হাসি খেলে যায়। সে আর বোনের দিকে তাকায় না। সে সাবলীল ভঙ্গিতে কথা বলে চলে তাসনিমের সঙ্গে। বলে চলে তার জীবনের কাহিনি। কথা বলতে বলতেই একসময় সরিয়ে ফেলে চোখের সানগ্লাস। তবু তাদের কথা থামে না। এগিয়ে চলে সম্পর্কের স্বপ্নতরী।




Comments: